একোন রাজ্যে বসবাস করছি আমরা। এযেন এক নতুন ত্রিপুরা, যেখানে প্রতিনিয়ত অপরাধ আর অপরাধীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গোটা রাজ্যে অপরাধের কার্নিভাল চলছে, আর রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে পুলিশের মহানির্দেশক, আইনের শাসন আর উন্নয়নের ঢেকুর তুলছেন। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় রাজপথে গাড়িতে ছিনতাই চালাচ্ছে দুস্কৃতিরা, রাতের আধারে পাহাড়ি অঞ্চলে গাড়ি জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, শহরের প্রানকেন্দ্রে জনবহুল এলাকায় দোকানে ঢুকে খুন করা হচ্ছে ব্যবসায়ীকে, চুরি ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটানতো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় আর রাজনৈতিক সন্ত্রাস সে তো বলে শেষ করার নয়। আর পুলিশের মহানির্দেশক রাজনৈতিক নেতাদের মত বেমালুম আইন শৃঙ্খলার উন্নতির ক্যাসেট বাজিয়ে নিজের দায়িত্ব খালাস করছেন।
এই ত্রিপুরা তো আবার সেই জোট জামানার ইতিহাস পুনরুদ্ধার করার শামিল। শহর, নগর, গ্রাম সর্বত্র একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোথাও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা দেখা যাচ্ছে না। সমস্ত অপরাধ আর অপরাধীরা রাজনৈতিক স্লোগানের ক্ষমতায় নিজেদের আড়াল করে যাচ্ছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্লাব সংস্কৃতির উন্নয়নের আরও একটি করুন চিত্র এবার উঠে এলো দক্ষিনের শহর বিলোনিয়া থেকে। ক্লাব সংস্কৃতির আমুল পরিবর্তন হয়েছে, একটা সময় ক্লাব মানেই ছিলো নেশার আড্ডাস্থল আর দাদাগিরি সহ অবৈধ কামাই বানিজ্যের মিলনক্ষেত্র। রাজ্যে বিজেপি সরকারের প্রতিষ্ঠার পর এই সংস্কৃতি এখন ইতিহাস।
এখন ক্লাব মানে সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকান্ড, এই সরকারের সময়ে ক্লাব মানে মানুষের দ্বারা,মানুষের জন্য, মানুষের সেবায় নিয়োজিত কতগুলি মানুষের মিলনস্থল। এই কথা গুলি প্রতিবেদকের নয়, এই কথা গুলি খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শুনা যায় প্রায়শই। কিন্তু আদতে বাস্তব অন্য কথা বলে। এবছর শারদোৎসবের আগে চাঁদার জুলুম নিয়ে ক্লাব গুলিকে সতর্ক শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কতাকে একটা অংশের অতিউৎসাহী ক্লাব কর্মকর্তারা কলাপাতে ভেবে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে দেখা যায়। খোদ রাজধানী শহরে একাধিক ক্লাবের বিরুদ্ধে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠে আসে, এছাড়া গোটা রাজ্য থেকে এরকম চাদার জুলুমের ডজন খানেক ঘটনা সামনে আসে। কোথাও গাড়ি আটকে লাখ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিমান্ড করে একাধিক ক্লাব। কদমতলার ঘটনা সকলেরই জানা শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রুপ নেয়।
এসব ঘটনা গুলি বলার একটাই উদ্যেশ্য, এই ঘটনা গুলির এখনো ইতি ঘটেনি। দুর্গোৎসব শেষ হলেও চাঁদার জুলুম এখনো চলছে। এমনই একটি ঘটনা শুক্রবার রাতে সংঘটিত হয় বিলোনীয়া শহরে। বিলোনিয়া সুপ্রাচীন ক্লাব ব্লাড মাউথ ক্লাব। এই চাঁদার জুলুমের চিত্র রুপ নেয় ছিনতাইয়ে। জানা যায়, রানীরবাজার থানা এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিত সাহা, লংতরাই গুরো মশলার সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত। গোটা রাজ্যেই গুরো মশলার মার্কেট করেন তিনি। শুক্রবার তিনি দক্ষিন জেলার বিলোনিয়ায় মার্কেট করেন। এদিন রাত প্রায় ৯ টা বিলোনীয়া শহরে কাজ সেরে সেখানেই যাত্রী যাপন করার পরিকল্পনা করেন বিশ্বজিত বাবু সহ মশলা কোম্পানীর গাড়ির চালক। তারা দুজনেই গাড়ি করে গন্তব্যে যাওয়ার পথে রাত প্রায় সাড়ে নটায় বিলোনিয়া ব্লাড মাউথ ক্লাবের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে তাদের গাড়ি আটকায় ব্লাড মাউথ ক্লাবের তিন কর্মকর্তা। গাড়ি আটকে চালকে বলা হয় তারা দুর্গাপূজার চাদা দেয়নি কেন। সে জানায় আমার হাতে তো কোনো কিছু নেই, মালিক পক্ষ থেকে চাঁদা দেওয়া হলেই তারা চাঁদা দিতে পারেন।
তখন বলা হয় ম্যানেজার কোথায় তখন চালক সেলসম্যান বিশ্বজিত বাবুর দিকে তাকালে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করেন ব্লাড মাউথ ক্লাবের তিন বুড়ো মাফিয়া। এই মাফিয়ারা প্রত্যেকেই আর্থিক দিক দিয়ে এতটাই প্রভাবশালী যে এই এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই। এখানেই শেষ নয় মারধর করে সেলসম্যান বিশ্বজিত সাহার ব্যাগে থাকা কালেকশনের ২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়, সেইসাথে তাকে ধারালো অস্ত্র বের করে প্রানে মারতেও উদ্ধত হয় বলে অভিযোগ। যদিও গাড়ি চালকের চতুরতায় সেলসম্যান বিশ্বজিত ও গাড়ি চালক গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে প্রানে বেচে পালায়। ব্লাড মাউথ ক্লাবের এই তিন বুড়ো মাফিয়া যথাক্রমে উৎপল বৈদ্য, পিতা – মৃত আশুতোষ বৈদ্য, সুরেশ চন্দ্র নাথ, পিতা – মৃত গৌরাঙ্গ চন্দ্র নাথ ও রাখাল দেবনাথ, পিতা – মৃত নগেন্দ্র দেবনাথ। ঘটনার পর রাত কাটিয়ে শনিবার সকালে বিলোনিয়া থানার দারস্ত হন লংতরাই গুরো মশলার সেলসম্যান বিশ্বজিত সাহা। উল্লেখিত তিন বুড়ো মাফিয়ার বিরুদ্ধে ছিনতাই সহ মারপিটের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এই ঘটনার প্রায় ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেছে বলে কোনো খবর নেই। অভিযুক্ত তিন বুড়ো মাফিয়াই আর্থিকভাবে প্রভাবশালী পাশাপাশি বর্তমানে শাসক দলের নামাবলি গায়ে জড়ান বলেই খবর। তবে কোন পুলিশের এতো ক্ষমতা যে তাদের কর্লারে হাত দেয়। তারউপর পুলিশ মহানির্দেশক তো উন্নততর আইন শৃঙ্খলা উপহার দিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মানুষকে। সে জায়গায় থানা বাবুদের এক্সট্রা পরিশ্রমের কি প্রয়োজন। আর রাম জামানায় ক্লাব কর্মকর্তারা সব রত্নাকর দস্যূ থেকে বাল্মিকি হয়েছেন। তাই সুশাসন আর আর স্বর্গরাজ্য এখন ত্রিপুরা। তাই শুরুতে যা বলা হয়েছিলো ” এ যেন অন্য ত্রিপুরা ” বাস্তবেই এ এক অন্য ত্রিপুরা।