খবর নেই শাসকের! কদমতলা কাণ্ড পরিদর্শনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ বিরোধীদলের একঝাঁক নেতা মন্ত্রীরা।
উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলায় গত ছয় অক্টোবর ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনার একমাস দুদিন অতিবাহিত হলেও রাজ্য বর্তমান ডাবল ইঞ্জিন সরকারের পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি কিংবা কোন নেতা মন্ত্রীরা পরিদর্শনে আসেননি এখনো।এরই মধ্যে দেরিতে হলেও ঘুম ভাঙলো বিরোধী দল সিপিআইএম এর। ৮ই নভেম্বর শুক্রবার সকাল এগারোটা নাগাদ কদমতলার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরিদর্শনে আসেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ এক ঝাঁক সিপিআইএম রাজ্য নেতৃত্বরা।এদিন প্রথমেই তারা চলে যান তারাকপুর ৫নং ওয়ার্ড়ে সেখানে মারপিটের ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়া সঞ্জয় পালের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার খোঁজখবর নেন।
সেখান থেকে চলে যান কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত নব নিবার্চিত প্রধান মখলিসুর রহমান ও উপ প্রধান আব্দুল তাহির সহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সাধারন জনগনদের সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন।সেখান থেকে চলে আসেন বাঘন গ্রাম পঞ্চায়েতের ২নং এলাকার বাসিন্দা তথা হিংসাত্মক ঘটনায় মৃত যুবক মোহাম্মদ আলফেশানি আহমেদের বাসভবনে সেখানে গিয়ে মৃত যুবকের পিতা আমির উদ্দিন সহ পরিবার-পরিজনদের সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করে সান্তনা দেন।পাশাপাশি একি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সিপিএম দলের নেতৃত্ব খলিল উদ্দিন এর বাসভবনে যান উনি হিংসাত্মক অপ্রীতিকর ঘটনার রাতে গুরুতর ভাবে আহত হয়েছিলেন। উনার বাড়ির পাশে থাকা আব্দুল সবুর মাস্টারের বাড়িতে যান এই ঘটনায় উনার পুত্র গুরুতর ভাবে আহত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। সেখান চলে আসেন সোজা ইন্ডিয়ান ক্লাবের সামনে থাকা আক্রান্ত বাপন সেন ও বিকাশ নাথের বাসভবন পরিদর্শন করেন।
সেখান থেকে চলে আসেন কদমতলা বাজারে।সেখানে এসে কদমতলা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক বিভু না,ওরফে কুটু কে সঙ্গে নিয়ে
বাজার এলাকায় টানা তিনদিন ধরে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনায় উভয় সম্প্রদায়ের ছোট-বড় প্রায় ১৬৫ টি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন তিনি।সেখানে ভাঙচুর,অগ্নি সংযোগ,লুটপাট হয়ে যাওয়া দোকান গুলো একে একে পরিদর্শন করেন মানিক সরকার সহ তার টিম। কথা বলেন প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত দোকানীদের সাথে।তার মধ্যে অনেকেই পুনরায় দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।তাই সে সময় যারা যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রত্যেকের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি।পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত কদমতলা বাজার মসজিদ এবং একটি শনি মন্দির পরিদর্শন করেন সিপিআইএম রাজ্য নেতৃত্বরা। তারপর দক্ষিণ কদমতলায় আক্রান্ত দুটি সুজন নাথের বাড়িতেও যান পরিদর্শনে আসা সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বরা,মতবিনিময় করেন সেখানেও।সবশেষে কদমতলার মুলিউরা এলাকায় সংখ্যালঘুদের সাতটি বাড়ি পরিদর্শনে যান তারা।পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে সমস্ত ঘটনা জানার চেষ্টা করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ সকলে।
এদিনকার এই পরিদর্শনকালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ছাড়াও সাথে ছিলেন,বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে,সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাস,স্থানীয় বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন,প্রাক্তন মন্ত্রী বিজিতা নাথ,৫৭ নং যুবরাজ নগর কেন্দ্রের বিধায়ক শৈলেন্দ্র নাথ,ধর্মনগর মহাকুমা কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ দে সহ আরো অনেকেই।এদিন পরিদর্শন শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকার সহ তার প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে দায়ী এবং ব্যর্থ।তা না হলে এমন ঘটনা ঘটত না।তাই এতদিন হয়ে গেলেও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সহ সরকারের কোন নেতা-মন্ত্রীরাই পরিদর্শনে আসেননি কেন, কিংবা কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি এ বিষয়ে।তিনি আরো বলেন যদিও এর অনেক আগেই আমরা আসতে চেয়েছিলাম,কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি,বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে ।
নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মানুষের দিশা ভঙ্গ করতে এমন চক্রান্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।তাছাড়া উক্ত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি দোকানদার এবং আক্রান্ত সবকটি বসতবাড়ির গৃহস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার আবেদন রাখেন তিনি।গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়া পরিবারের আর্থিক ক্ষতিপূরণ সহ পরিবারের যোগ্য কাউকে একটি সরকারি চাকরির দাবিও রাখেন তিনি।পাশাপাশি গুলি অন্যান্য যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান রাখেন শ্রী সরকার।সবশেষে তিনি এলাকার সকল অংশের মানুষের কাছে অনুরোধ জানান যে সবাই যেন পূর্বের ন্যায় ধর্য্য না হারিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়।তাছাড়া বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার প্রাসঙ্গিকতাও তুলে ধরেন মানিক সরকার।এদিন কদমতলা কান্ড পরিদর্শন শেষে বিকেল তিন ঘটিকায় পানিসাগরে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনার খোঁজখবর নিতে ছুটে যান পরিদর্শনে আসা সকলে।