কৈলাসহরের গোবিন্দপুর এলাকার রুহিদাস সরকার নামে এক নাবালক যুবক মায়ের সাথে রাগ ও অভিমান করে অবৈধভাবে ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় দেড় বছর বাংলাদেশের জেলে থেকে যুবকটি সাবালক হয়ে যায়। বিনা কারণে জেলে থাকার খবর পেয়ে বাংলাদেশের সমাজ কর্মী মো: আজাদ মিঞা এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী বিভূতি তরফদারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের হাইকোর্টের নির্দেশে অবশেষে কৈলাসহরের রুহিদাস সরকার তেইশ ডিসেম্বর বিকেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।
উল্লেখ্য, কৈলাসহরের গোবিন্দপুর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর দুলাল সরকার। দুলালের স্ত্রী প্রমিলা সরকার। তাদের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। দুলালের বড় ছেলে রুহিদাস সরকার। সাড়ে ষোলো বছরের রুহিদাস সরকার ২০২২সালের তেসরা জুন সকালবেলা নিজ বাড়িতে মায়ের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
বিকেল অব্দি বাড়িতে না আসায় দুলাল এবং প্রমিলা দেবী অনেক খোঁজাখোঁজির পর ছেলেকে না পেয়ে ঐই দিন রাতেই কৈলাসহর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এক বছরের উপর সময় চলে গেলেও গরীব দুঃস্থ অসহায় দুলাল সরকার এবং প্রমিলা সরকার প্রতিদিন ছেলের অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু কেউ ছেলের সন্ধান দিতে পারেনি। অন্যদিকে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক সমাজ কর্মী তথা বাংলাদেশের মৌলভিবাজার জেলার জেলা আদালতের কর্মরত দলিল লিখক মো: আজাদ মিঞা মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের বাংলাদেশের এক কয়েদির জামিনের জন্য কারাগারে যাবার পর কারাগারে থাকা রুহিদাস সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা হয় এবং রুহিদাস তার সমস্ত ঘটনা সমাজ কর্মী মো: আজাদ মিঞাকে জানান।
সমস্ত ঘটনা জানার পর সমাজ কর্মী আজাদ মিঞা রুহিদাস সরকারের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে কিছু একটা করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখবেন বলে জানান সমাজ কর্মী মো: আজাদ মিঞা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার অন্তর্ভুক্ত টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা সমাজ কর্মী মো: আজাদ মিঞার। পরবর্তী সময়ে চলতি মাসের আট ডিসেম্বর বাংলাদেশের সমাজ কর্মী মো: আজাদ মিঞা ভারতে এসে কৈলাসহরের গোবিন্দপুর এলাকায় অবস্থিত রুহিদাস সরকারের বাড়িতে যান। বাড়িতে গিয়ে রুহিদাস সরকারের মা বাবা সহ পরিবারের সবার সাথে কথা বলে রুহিদাস সরকারের আধার কার্ড সহ রুহিদাসের সমস্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নয় ডিসেম্বর মো: আজাদ মিঞা বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বরিস্ট আইনজীবী বিভূতি তরফদারের কাছে সমস্ত ঘটনা জানান। আইনজীবী বিভূতি তরফদার সমস্ত ঘটনা শোনে রুহিদাস সরকারকে কারাগার থেকে বের করে ভারতে পাঠানোর জন্য এগারো ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঢাকা হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন।
ঢাকা হাইকোর্ট সমস্ত ঘটনা জানার পর গত সতেরো ডিসেম্বর ঢাকা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে, খুব শীঘ্রই কারাগার থেকে রুহিদাস সরকারকে মুক্তি দিয়ে সন্মানের সহিত রুহিদাসকে ভারতে তার নিজ বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা হাইকোর্টের এই আদেশ বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার জেলা কারাগারের সুপারের কাছে গত কুড়ি ডিসেম্বর আসে। পরবর্তী সময়ে কারাগারের সুপার তেইশ ডিসেম্বর বিকেলে কৈলাসহরের ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিয়ে আসে।
এরপর বিজিবি বি.এস.এফের হাতে তোলে দেয় রুহিদাস সরকারকে। বি.এস.এফ রুহিদাস সরকারকে গ্রহণ করে রুহিদাস সরকারকে প্রায় এক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে কৈলাসহর থানার পুলিশের হাতে তোলে দেয়। পুলিশ রুহিদাস সরকারকে থানায় নিয়ে যাবার সময় রুহিদাস সরকার সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, গত বছরের অর্থাৎ ২০২২সালের তেসরা জুন মায়ের উপর অভিমান করে কৈলাসহরের ইরানী এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাটাতার কেটে অবৈধভাবে পাড় হয়ে বাংলাদেশে চলে যায়। বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশ করায় বিজিবি রুহিদাস সরকারকে গ্রেফতার করে গত বছরের তিন জুন। এরপর থেকে রুহিদাস বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার জেলা কারাগারে আটক ছিলো বলে জানায় রুহিদাস সরকার