সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের যে জল প্রাপ্য, তা আটকাতে ভারত কোনও বাঁধ তৈরি করলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এমনটাই জানালেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন আসিফ। সেখানেই তিনি পাকিস্তানের অবস্থান জানান। যদিও আসিফ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমস্যার কথা তুলে ধরছে ইসলামাবাদ। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। স্থগিত করা হয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ওই চুক্তি অনুসারে, সিন্ধু নদ এবং তার পশ্চিম তীরের উপনদীগুলির জল পায় পাকিস্তান। এই জলের উপরে গোটা দেশের ৮০ শতাংশ কৃষি নির্ভর করে আছে।
ভারত চুক্তি স্থগিত করার কথা জানালে জল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে। কারণ এই নদীগুলির উৎস ভারতেই। চুক্তি না মানলে বাঁধ দিয়ে জল আটকাতে পারে নয়াদিল্লি।সাক্ষাৎকারে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেন, ‘‘শুধু গুলি-বন্দুকেই আগ্রাসন হয় না। আগ্রাসনের আরও একটা রূপ জল আটকে দেওয়া। সেটা করলে খিদে-তেষ্টায় মানুষ মারা যেতে পারেন।’’ভারত এই ধরনের পদক্ষেপ করলে পাকিস্তানের অবস্থান কী হবে? আসিফ বলেন, ‘‘সিন্ধু সিস্টেমের নদীগুলির উপর কোনও বাঁধ তৈরি করে জল আটকানো হলে তা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন হিসাবে দেখা হবে। সে ক্ষেত্রে তা হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সরাসরি আগ্রাসন।
ভারত এমন কিছু করলে আমরা যে কোনও নির্মাণ গুঁড়িয়ে দেব।’’তবে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, আপাতত তাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছেন। যাবতীয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হচ্ছে। সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করলেও তার শর্ত লঙ্ঘন করা ভারতের পক্ষে তেমন সহজ হবে না বলেই মনে করছে ইসলামাবাদ। তারা এ বিষয়ে ভারতের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, জানিয়েছেন আসিফ।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ‘নাটক’ করছেন বলে অভিযোগ পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের দাবি আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলি মেনে নিচ্ছে না। কারণ মোদী সরকার দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
ভারত অনবরত উস্কানির নীতি নিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান তার প্রেক্ষিতে এখনই কিছু করবে না।’’পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্রমাবনতি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ। একে অপরের জন্য আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে। ফেরত পাঠানো হয়েছে নাগরিকদের। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা, চিন ও ইউরোপের দেশগুলি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের দিকে নজর রেখেছে। দুই পক্ষকেই সংযত হতে বলেছে তারা। তবে এখনও পর্যন্ত সম্পর্কের উন্নতির কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।