কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের উপর নৃশংস জঙ্গি হানার পর ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় কড়া বার্তা দিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বারবার স্পষ্ট করেছেন—এই হত্যালীলা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সেই আবহেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার।
*বাতিল হল ১৯৬০ সালের ‘সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি’*
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল করাচিতে। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় গঠিত এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জল ব্যবহারের অধিকার দুই দেশ ভাগ করে নিয়েছিল। কিন্তু এখন, সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল ভারত। এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের কৃষি ও সেচ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
*বন্ধ হল পাকিস্তান দূতাবাস ও সমস্ত ভিসা পরিষেবা*
নয়া দিল্লিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তান হাই কমিশন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘SAARC visa exemption’-এর আওতায় থাকা সব পাক নাগরিকদের ভিসা সুবিধা। পূর্বে দেওয়া সমস্ত ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত পাকিস্তানিকে ভারত ছাড়তে হবে। ভারতও ইসলামাবাদ থেকে নিজ দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে আনছে। আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত চেকপোস্টও আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
*সেনা বাহিনীকে ‘স্ট্যান্ডবাই’-এ রাখার নির্দেশ*
বুধবার সন্ধ্যা ছ’টায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন তিন বাহিনীর প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বৈঠকে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
*ডাকা হয়েছে সর্বদলীয় বৈঠক*
এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকছে। জাতীয় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন এবং সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে।
ভারতের এমন কড়া পদক্ষেপ সাফ বার্তা দিচ্ছে—সন্ত্রাসের মদতদাতা দেশকে আর কোনও রকম সহনশীলতা দেখাবে না দিল্লি। পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরেও চাপে রাখার প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারত।