লখনউয়ের বিরুদ্ধে ২৩৯ রানের বোঝা তাড়া করতে নেমেও একটা সময় পর্যন্ত জয়ের পথে ছিল কেকেআর। একটি উইকেট এবং একটি ওভার খেলা ঘুরিয়ে দিল লখনউয়ের দিকে।শাহরুখ খানের সিনেমার বিখ্যাত সংলাপ ছিল, ‘হার কর জিতনেওয়ালেকো বাজিগর কেহতে হ্যায়’। মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে তাঁর দল কেকেআর অবশ্য করল ঠিক উল্টোটা। তারা জিততে জিততে হেরে গেল। লখনউ সুপার জায়ান্টসের তোলা ২৩৮/৩-এর বোঝা নিয়ে খেলতে নেমেও একটা সময় ম্যাচে ছিল কেকেআর। তবে একটা ওভার এবং একটা উইকেট জয়ের স্বপ্ন শেষ করে দিল। ইডেনে চওড়া হাসি দেখা গেল শহরের শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্কার, যাঁর কাছে বরাবরই এই ম্যাচ সম্মানের লড়াই। সেই লড়াইতে আপাতত তাঁর দল ৪-২ এগিয়ে।
নিকোলাস পুরান এবং মিচেল মার্শের ব্যাটিং লখনউয়ে জয় এনে দিল। বৃথা গেল রাহানের লড়াই।টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাহানে। তবে লখনউয়ের ইনিংস চলাকালীন এক বারও কেকেআরের খেলা দেখে মনে হয়নি তারা কোনও পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে। বোলিংয়ের সময় তাদের হতশ্রী অবস্থা বেরিয়ে পড়ল। আসলে এই কেকেআর ভরসা করেই চলেছে স্পেন্সার জনসনের মতো বিদেশি বোলারের উপরে, যিনি নিজের দেশের টি-টোয়েন্টি দলেও নিয়মিত সুযোগ পান না। ডাগআউটে অনরিখ নোখিয়ার মতো বোলার থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে দিনের পর দিন বসিয়ে রাখা হচ্ছে তাঁর উত্তর কি চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, ডোয়েন ব্র্যাভোরা দিতে পারবেন? জনসনের এতটাই খারাপ অবস্থা যে তিন ওভারে ৪৬ হজম করার পর তাঁকে দিয়ে শেষ ওভার করানোর ঝুঁকিই নেওয়া হল না।বৈভব অরোরা প্রথম ওভারে দেন তিন রান। তৃতীয় ওভারে দেন পাঁচ।
বরুণ চক্রবর্তী প্রথম ওভারে দেন পাঁচ রান, দ্বিতীয় ওভারে ছয়। এ ছাড়া বাকি আর কোনও ওভার খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে লখনউ ব্যাটারেরা কাউকে দয়ামায়া দেখিয়েছেন। মিচেল মার্শ এমনিতেই ফর্মে ছিলেন। তাঁকে থামানোর জন্য বিশেষ কোনও পরিকল্পনা দরকার ছিল। কেকেআরের বোলিংয়ে সেই ঝাঁজটাই দেখা গেল না যা মার্শকে বিব্রত করতে পারে। উল্টে এডেন মার্করামকেও ফর্মে ফিরিয়ে দিল কেকেআর।প্রথম উইকেটেই যদি কোনও দল ৯৯ তুলে দেয়, তা হলে ম্যাচে যে তাদের প্রাধান্য থাকবে সেটা স্বাভাবিক। মার্করামকে ইনসুইঙ্গারে হর্ষিত ফেরানোর পরেও কেকেআরের অস্বস্তি কমেনি। কারণ লখনউ দলে মারকাটারি ব্যাটারের কোনও অভাব নেই। সেটাই হল। মার্শ এক দিক থেকে মারছিলেন। যোগ দিলেন নিকোলাস পুরান। শুরু করলেন জনসনকে জোড়া চার মেরে। সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী কেউ বাদ গেলেন পুরানের সংহার থেকে।
হর্ষিতকে জোড়া ছক্কা মেরে ২১ বলে অর্ধশতরান করে ফেললেন।নারাইন, বরুণ যখন সফল হচ্ছেন না, তখন কেন বেঙ্কটেশ আয়ার, রিঙ্কু সিংহের মতো পার্টটাইম স্পিনারকে আনলেন না রাহানে তা বোঝা গেল না। তেমনই দুর্বোধ্য আন্দ্রে রাসেলকে ১৫তম ওভারে বল করতে আনা। স্লোয়ার বল দিয়ে বিপক্ষ ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রাসেলের। নিজের প্রথম ওভারেই মার্শকে ফিরিয়ে জুটিও ভেঙে দেন। তবে পুরানের সংহার-মূর্তি থেকে রক্ষা পাননি তিনিও। রাসেলের দ্বিতীয় ওভারে তাঁকে তিনটি চার এবং দু’টি ছয় মেরে ২৪ রান নেন পুরান। সাতটি চার এবং আটটি ছয় মেরে ৩৬ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আর গোটা কয়েক বল খেলার সুযোগ পেলে শতরানও করে ফেলতে পারতেন। ফর্মে না থাকায় পন্থ নামেননি।২৩৯ তোলার লক্ষ্য নিয়ে রান তাড়া করতে নামা মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে কেকেআরের মাথায় এটাই ছিল যে, গত মরসুমে এই মাঠে ২২৮ এবং ২৬১ রান তুলে হেরেছে তারা। এ দিন পিচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল তাতে বোলারদের জন্য বিশেষ কিছু নেই।
নিকোলাস পুরানের সামনে কেকেআর বোলারদের অসহায় অবস্থাই সেটা বলে দিচ্ছিল।এত রানের বোঝা থাকলে থিতু হওয়ার সময় থাকে না। শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে হয়। কেকেআরও তাই করেছিল। কুইন্টন ডি’কক এবং সুনীল নারাইন আকাশ দীপের প্রথম ওভারেই নেন ১৬ রান। শার্দূল ঠাকুরের ওভার থেকে আসে ১৫। তৃতীয় ওভারে ডি’কক আউট হলেও কেকেআরের রানের গতি কমেনি। তিনে এ দিন অঙ্গকৃষ রঘুবংশীকে নামানো হয়নি। অধিনায়ক রাহানে নিজে নামেন এবং শুরুটাই করেন আকাশ দীপকে দু’টি চার মেরে। উল্টো দিকে নারাইন নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলছিলেন। বহু দিন পর পুরনো নারাইনকে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু সেই ইনিংস দীর্ঘায়িত হল না তাঁরই দোষে। দিগ্বেশ রাঠীর প্রথম বলই তুলে খেলার কোনও দরকার ছিল না।
নারাইনের (৩০) ক্যাচ ধরেন এডেন মার্করাম।চারে তুলে আনা হয় বেঙ্কটেশকে। অন্যান্য বারের মতো শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার রাস্তায় হাঁটেননি ২৩.৭৫ কোটির বেঙ্কটেশ। অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ক মিলে রান রেট নাগালের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করছিলেন। রাহানে অর্ধশতরানও করেন। তবে শার্দূলের স্লোয়ার ফুলটসে ঠকে গিয়ে পুরানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।খেলা ঘুরে গেল ওই একটা আউটেই। যত ক্ষণ রাহানে-বেঙ্কটেশ ক্রিজ়ে ছিলেন তত ক্ষণ মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা কেকেআর জিততে পারে। রাহানে ফিরতেই তাসের ঘরের মতো ধসে গেল কেকেআর। ১৪তম ওভারে রবি বিশ্নোই দিলেন মাত্র চার রান। নিলেন রমনদীপ সিংহের উইকেট। পরের ওভারে আবেশ সাত রান দিয়ে তুললেন রঘুবংশীকে। আস্কিং রেট যেখানে ১০-এর কাছাকাছি ছিল, তা লাফিয়ে ১৩ পেরিয়ে গেল। ক্রিজ়ে জমে গিয়েও উইকেট ছুড়ে দিলেন বেঙ্কটেশ (৪৫)।