বেবি সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতা ছিলেন। পরবর্তী কালে যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ বার পার্টির শীর্ষপদে এলেন।ক্রমশ আরও বেশি দক্ষিণে ঝুঁকছে সিপিএম। সীতারাম ইয়েচুরির পর দলের নতুন সাধারণ সম্পাদকও হলেন দক্ষিণ ভারত থেকেই। সিপিএমের শীর্ষপদে কেরলের নেতা মারিয়াম আলেকজ়ান্ডার বেবিকে বসাল মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস।বেঁচে থাকলে সীতারাম এ বার দলের বয়সবিধিতে পড়তেন। যেমন পড়লেন প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাটরা। তবে সিপিএমের বড় অংশই মনে করেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতি’তে সীতাকেই দলের সাধারণ সম্পাদক রেখে দেওয়া হত। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে বিকল্প খোঁজা ছাড়া উপায় ছিল না সিপিএমের। একাধিক নাম বিবেচনার পর কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী বেবিকেই সর্বসম্মত ভাবে বেছে নেওয়া হল।
শনিবার ছিল বেবির জন্মদিন। ৭০ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। তাঁকেই আগামী তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দিল দল। সিপিএম যে বয়সবিধি করেছে, তাতে বেবিকে দু’টি মেয়াদ (ছ’বছর) এই দায়িত্বে রাখার ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।গত কয়েক দশক ধরেই সিপিএমের ভরকেন্দ্র দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ (কেরল) এবং পি সুন্দরাইয়ার (অন্ধ্রপ্রদেশ) পর একটা দীর্ঘ সময় সিপিএমের শীর্ষপদে ছিলেন পঞ্জাবের হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ। তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্ব পান কারাট। তার পর সীতারাম। এই দু’জনই দক্ষিণী। কারাট কেরলের। সীতারাম অন্ধ্রের। যদিও দীর্ঘদিন তাঁরা দিল্লিতে দলের কাজ করায় সেই অর্থে রাজ্য রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু বেবি কেরলের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। ১৯৮৬-১৯৯৮ এই ১২ বছর কেরল থেকেই রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। ফলে কোল্লামের এই ভূমিপুত্র সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় দলের ভরকেন্দ্র আরও দক্ষিণে ঝুঁকল বলেই অভিমত অনেকের।
বেবি সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতা ছিলেন। পরবর্তী কালে যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ বার দলের সাধারণ সম্পাদক পদে এলেন। সুরজিতের পরে ফের কোনও সংখ্যালঘু অংশের (খ্রিস্টান) কোনও নেতা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। বেবি নিজে ছবি তুলতে পছন্দ করেন। আগে ক্যামেরা ব্যবহার করলেও এখন ফোনেই ছবি তোলেন। সিপিএম যখন জাতীয় রাজনীতিতে বিপন্নতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন তাঁর হাতেই ‘ছবি’ বদলের দায়িত্ব সঁপল দল। বাংলায় দল শূন্য, ত্রিপুরায় শাসক বিজেপির সমীকরণের কারণে প্রধান বিরোধী দলের তকমা রয়েছে। ক্ষমতায় একমাত্র কেরলে।
বাংলা এবং কেরলে পরের বছরই ভোট।সীতারমের মৃত্যুর পরে প্রকাশ, বৃন্দারা চেয়েছিলেন বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দায়িত্ব নিন দলের। কিন্তু সেলিম রাজ্য ছেড়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি। দলের একাংশ কৃষক নেতা অশোক ধাওয়ালের নামও তুলেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ তাতে রাজি হননি। ধাওয়ালে কৃষক আন্দোলনের নেতা। কয়েক বছর আগে তাঁর নেতৃত্বেই নাসিক থেকে মুম্বই কৃষকদের লং মার্চ মরাঠা মুলুকে আলোড়ন ফেলেছিল। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর কোনও অভিজ্ঞতা নেই। ধাওয়ালে এমনিতে ডাক্তার। কিন্তু সিপিএমের রোগ সারাতে তাঁকে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব দিল না পার্টি কংগ্রেস।বয়সের কারণে বিদায়ী পলিটব্যুরোর সদস্যদের মধ্যে সাত জনের বাদ পড়ার কথা ছিল।
সেই তালিকায় ছিলেন প্রকাশ, বৃন্দা কারাট, সুহাষিনী আলি, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বাংলার সূর্যকান্ত মিশ্র এবং তামিলনাড়ুর জি রামকৃষ্ণন। তবে ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে বিজয়নকে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হল। বাকি ছ’জন সরে গেলেন। সিপিএমে প্রজন্ম বদল ঘটে গেল মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে।বাংলা থেকে সূর্যকান্তের জায়গায় পলিটব্যুরোর সদস্য হলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। ত্রিপুরার মানিকের জায়গায় রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী পলিটব্যুরোর সদস্য হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য অন্তর্ভুক্তি রাজস্থানের সিকারের সাংসদ অমরা রাম।