শ্রীলঙ্কার মাটি এবং জলপথ ব্যবহার করে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা দিশানায়েক। ভারতের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর কোনও কাজে শ্রীলঙ্কার মাটি এবং জলভাগকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। বস্তুত, গত কয়েক বছরে চিনের বেশ কিছু জাহাজ শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে, ভারত মহাসাগরে ঘুরপাক খেয়েছে। শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের একাংশ ইজারা নিয়েছে চিন। এই পরিস্থিতিতে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে অনুরার এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলির পারস্পরিক সহযোগিতার আন্তর্জাতিক মঞ্চ ‘বিমস্টেক’-এর সম্মেলন শেষে শুক্রবার রাতেই তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক থেকে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছেন মোদী। শনিবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন অনুরা। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক (মউ)-ও স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রথম বার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশী দেশের মউ স্বাক্ষরিত হল। পরে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, মোদীর সঙ্গে বৈঠকে অনুরা কথা দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার মাটি এবং জলভাগ ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে উঠে এসেছে মৎস্যজীবীদের প্রসঙ্গও। ভারতীয় মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে কখনও কখনও ভুলবশত শ্রীলঙ্কার জলসীমায় প্রবেশ করে যান। এমন বেশ কয়েক জন মৎস্যজীবী এখনও শ্রীলঙ্কার জেলে বন্দি। ভারতীয় মৎস্যজীবীদের যাতে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হয়, সে কথাও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন মোদী। বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে অনুরাকে পাশে নিয়ে আবারও সেই কথা বলেছেন তিনি। মোদী বলেন, “মৎস্যজীবীদের বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তাঁদের (মৎস্যজীবীদের) দ্রুত ছেড়ে দেওয়া উচিত। তাঁদের নৌকাও ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।”পরে বিদেশসচিব মিস্রী জানান, ভারতকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ১১ জন মৎস্যজীবীকে শীঘ্রই মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ। আগামী দিনে আরও মৎস্যজীবীকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশাবাদী তিনি।২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই নিয়ে চতুর্থ বার শ্রীলঙ্কায় গেলেন মোদী। গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বাম নেতা অনুরা। এর পরে ডিসেম্বরে দিল্লি এসে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি।
সেই বৈঠকেও শ্রীলঙ্কার মাটিকে ভারত-বিরোধী তৎপরতায় ব্যবহার না করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরের একাংশ চিন ইজারা নেওয়ায় পরিস্থিতির উপর সর্ব ক্ষণ নজর রেখে গিয়েছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে শনিবার মোদীর সঙ্গে বৈঠকে আবারও নিজেদের অবস্থানের কথা জানালেন অনুরা।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এ বারের কলম্বো সফরে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে মোট সাতটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত মউ। আগামী দিনেও শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে ভারত পাশে থাকবে বলে অনুরাকে আশ্বস্ত করেছেন মোদী। অনুরাও ভারতকে ‘খুব কাছের’ বন্ধু হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ ভাবনারও প্রশংসা করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।