শুক্রবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আগরতলা টাউনহলে একদলীয় সভায় বলেছেন ত্রিপুরা ট্যুরিজম প্রোমো ফেস্টের নামে কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। এক রাতে সাত কোটি টাকা ব্যয় করে এই প্রমো ফেস্ট এর আয়োজন করা হয়েছে। এবং এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রীরা নেচেছেন কিনা তিনি জানেন না। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে শনিবার ত্রিপুরা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। এদিন গীতাঞ্জলি গেস্ট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন গত তিন ৩ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই প্রোমো ফেস্ট।
অত্যন্ত সুশৃংখল এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যে প্রথমবার নারিকেল কুঞ্জ, নীরমহল, জম্পুই পাহাড়ে এই অনুষ্ঠান হয়। সর্বশেষ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথমবার স্থানীয় যুবকদের হোম স্ট্রে সার্টিফিকেট ও বিতরণ করা হয়। যাতে পর্যটকদের তারা কম খরচে থাকার বন্দোবস্ত করে দিতে পারে। এবং এই অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন রাজ্যের মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে, অপরদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করেছে ব্যবসায়ীরা। জম্পুই পাহাড়ে একটি মিজু সংগঠনের মানুষ এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখে অত্যন্ত আপ্লুত হয়েছেন। তারা পরবর্তী সময়ে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি করেছেন এ ধরনের অনুষ্ঠান যাতে আবারো করা হয়। প্রয়োজনে তারা জমি প্রদান থেকে শুরু করে অন্যান্য সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।
সর্বশেষ অনুষ্ঠানটি ছিল স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষালের কনসার্ট। এই অনুষ্ঠান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী এবং পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার। ওনার মুখে এ ধরনের কথা শোভা পায়নি। দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত কে পরিচিতি এনে দিতে পারেননি তাদের সরকার। এবং তাদের মধ্যে কোন চেষ্টাই ছিল না ত্রিপুরার পর্যটনকে পরিচিতি দেওয়ার। তাদের সময় পর্যটন দপ্তর মানেই ছিল লাল টুপি পড়ে লম্বা লম্বা ভাষণ দেওয়া। এবং তাদের দলের কাছে পর্যটনের কোন গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তাই এখন এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখে তাদের হিংসা হচ্ছে। আগামী দিন এ ধরনের মন্তব্য করার আগে যাতে তথ্য ভিত্তিক কথা বলেন। চারবারের একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য আশা করা যায় না বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী।
২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ১৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৭৬ জন পর্যটক দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছে। বিশ্ব থেকে পর্যটক এসেছে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪০৪ জন। সর্বমোট পর্যটক এসেছে ২০ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৮০ জন। সব মিলিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ এসেছে পনেরো কোটি ৫২ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক এসেছে ২১ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৬২ জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক এসেছে ৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৮২৮ জন। এ পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ এসেছে ৩১ কোটি ২৫ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা।
মন্ত্রী আরো বলেন নারিকেল কুঞ্জ, ডুম্বুর, উনকোটি, জম্পুই, ছবিমুড়ায় পর্যটন কেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করতে অর্থ ব্যয় করে উন্নতি সাধন করেছে বর্তমান সরকার। তিনি আরো তথ্য তুলে ধরে বলেন, তৎকালীন সরকারের সময় রাজ্যে পর্যটনের জন্য ব্যয় হয়েছিল ৮২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। তারা সেপাহী জলা, তীর্থমুখ, নীরমহল, আখড়ার চেকপোস্ট, বড়মুড়ায় এবং উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের কিছু টাকা ব্যয় করেছে। বর্তমান সরকার ঊনকোটির স্বদেশ দর্শনে ব্যয় করেছেন ৪৪ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা, মাতারবাড়ির প্রসাদ স্কিমের জন্য ৩৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, ছবিমুড়া, অমর সাগরের জন্য এডিবি ১৮০ কোটি টাকা, স্পেশাল এসিস্ট্যান্টের জন্য ১৪ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা, পরবর্তী সময় আবার ৪ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা, অপরদিকে স্বদেশ দর্শন টু -এর জন্য ১৪০ কোটি টাকা আগামী ১ থেকে দেড় মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে। বনদোয়ারের একান্ন শক্তি পিঠের জন্য ৯৭ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা এসেছে।
স্পেশাল এসিস্ট্যান্টের জন্য ৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা এসেছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ৫২৯ কোটি টাকার কাজ গত ছয় বছর ধরে চলছে বলে জানান তিনি। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ট্যুরিজমের ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে তোলার জন্য এর টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। আগামী থেকে দু বছরের মধ্যে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্র গুলির সেজে উঠবে বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন বামফ্রন্ট সরকার চাইনি ত্রিপুরার পর্যটন উন্নত হোক। কারণ পর্যটন কেন্দ্র রাজ্যে উন্নত হলে রাজ্যের মানুষ নতুন নতুন স্বপ্ন দেখবে। পর্যটকরা ত্রিপুরায় আসবে।