উত্তর পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় বিভিন্ন প্রকল্প স্থাপনের বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এজন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।সোমবার মুম্বাইয়ের কোলাবায় তাজমহল প্যালেস হোটেলে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রোড শোতে বক্তব্য রাখার সময় এবিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মুম্বাইয়ে রোড শো আয়োজন করায় আমি এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
উত্তর পূর্বাঞ্চলে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রক বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিকাশে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষী হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। এই অঞ্চলের উন্নয়নে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি ঘোষণা করেছেন তিনি।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলেরই একটি রাজ্য ত্রিপুরা, যেটা বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমান্ত বেষ্টিত রয়েছে। পূর্বাংশে রয়েছে আসাম ও মিজোরাম রাজ্য। এটা দেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য।
ত্রিপুরার রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি সংস্কৃতি। ত্রিপুরা দেশের মধ্যে এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে অন্যতম শান্তিপূর্ণ রাজ্য। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত রয়েছে, যা একে উদ্বৃত্ত শক্তির জোগান দেয়। ত্রিপুরার অর্থনীতি প্রাথমিকভাবে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০২৪ সালে রাজ্যের আনুমানিক মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ ১.৭৭ লক্ষ টাকা, যা ২০২৩ সালে ১.৫৭ লক্ষ টাকা ছিল। ত্রিপুরার জিএসডিপি ৮.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা উত্তর পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জিএসডিপি বৃদ্ধির হার। আমরা রাজ্যের সামর্থ্য ও সম্পদকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে একটি বিনিয়োগকারী বান্ধব পরিবেশ তৈরি করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সারা রাজ্যে শিল্প ও মৌলিক পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়াস জারি রেখেছে রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিরা মডেল দিয়েছেন আমাদের। এজন্য যোগাযোগ ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়েতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে রাজ্যে। মহারাজা বীর বিক্রম (এমবিবি) বিমানবন্দরকে আপগ্রেড করা হয়েছে, যা এটিকে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় ব্যস্ততম ও আকর্ষণীয় বিমানবন্দরে পরিণত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় রাজ্য সরকার দক্ষিণ জেলার প্রান্তিক শহর সাব্রুমে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) গড়ে তুলেছে, যা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষন বাড়িয়েছে।
রাবার, বাঁশ, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষিজাত পণ্য, আগর, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চা, হস্তশিল্প এবং পর্যটনের মতো দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে শিল্পের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে ত্রিপুরায়। আমাদের উত্তর জেলায় ২,০০০ হেক্টর জুড়ে ৫ মিলিয়নেরও বেশি আগর গাছ রয়েছে। আমরা বোধজংনগরে একটি রাবার পার্ক স্থাপন করেছি। আর একটি দক্ষিণ জেলায় পরিকল্পনা করা হয়েছে। ত্রিপুরায় ২১ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে এবং একটি ব্যাম্বো পলিসি চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উদ্যান জাতীয় ফসলের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে ত্রিপুরার। যেমন কুইন আনারস, যাকে রাজ্য ফল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি জিআই ট্যাগ পেয়েছে।
পর্যটন ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে। আর পর্যটন শিল্পে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা। পর্যটকের সংখ্যা এখন দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে ত্রিপুরায়। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অন্যতম শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ত্রিপুরা। এখানে ই-অফিস এবং ই-ক্যাবিনেটের মতো অসাধারণ উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, ডোনার মন্ত্রকের সচিব চঞ্চল কুমার, যুগ্ম সচিব মোনালিসা দাস সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এর পাশাপাশি এই সামিটে অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট উদ্যোগপতি, শিল্পপতি সহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিগণ।