আবারও ত্রিপুরা রাজ্যে চিকিৎসক আক্রান্ত। তাও আবার খোদ শাসক দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা জেলা পরিসদের প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি তথা বর্তমান জেলা পরিসদের সদস্যের নেতৃত্বে যুবকরা সরকারি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসককে আক্রান্ত করেছে। ঘটনা কৈলাসহরের ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে। আক্রান্ত চিকিৎসক কৈলাসহর থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এই ঘটনায় চিকিৎসক মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কৈলাসহরের ভগবান নগর এলাকায় অবস্থিত ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের আক্রান্ত চিকিৎসক ধ্রুপদ দাস ছয় ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, গতকাল পাঁচ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে এক দুর্ঘটনাগ্রস্থ গুরুতর জখম রোগীর চিকিৎসা করানোর সময় শ্যামল দাসের নেতৃত্বে তিনজন যুবক ইমারজেন্সি বিভাগের ভিতরে ঢুকে। সেইসময় তিনজনের মধ্যে থাকা রঞ্জিত দাস নামে এক যুবকের রক্তাক্ত মাথা দেখে চিকিৎসক ধ্রুপদ দাস বলেন যে, আপনারা পাশের ড্রেসিং রুমে গিয়ে প্রথমে ড্রেসিং করিয়ে নিন এবং সেই ফাঁকে চিকিৎসারত রোগীর চিকিৎসাও শেষ করে নেব।
চিকিৎসক ধ্রুপদ দাসের এই কথা শোনার পর শ্যামল দাস উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং হুমকি দিতে থাকে। চিকিৎসক ধ্রুপদ দাস কিছু বুঝে উঠার আগেই শ্যামল দাস চিকিৎসকের গালে চড় দিয়ে দেয়। সেইসময় ইমারজেন্সি বিভাগে কৈলাসহর থানার কয়েকজন পুলিশও ছিলেন। পুলিশ শ্যামল দাসকে আটকাতে গেলে পুলিশকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করে যুবকরা। সাথে সাথেই অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা সম্পুর্ন ঘটনা মোবাইল দিয়ে ভিডিও গ্রাফি করে রাখে। পরবর্তী সময়ে জেলা হাসপাতালে সাধারণ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শ্যামল দাস সহ তিনজন জেলা হাসপাতাল থেকে চলে যায়। এবং শ্যামল দাসের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের সি.সি টিভিতে রেকর্ড হয়ে রয়েছে।
সি.সি টিভির সেইসব ভিডিও ফুটেজ ছয় ডিসেম্বর দুপুরে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধিদেরও দেওয়া হয়েছে। ছয় ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল এগারোটা নাগাদ জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডক্টর রোহন পাল, আক্রান্ত চিকিৎসক ধ্রুপদ দাস, জেলা হাসপাতালের ডক্টর প্রসেনজিত দাস, ডক্টর শুভ্র নিলয় দাস, ডক্টর ময়ূরী পাল সহ মোট পাঁচজন চিকিৎসক কৈলাসহর থানায় এসে শ্যামল দাস, সন্দীপ দাস এবং রঞ্জিত দাস এই তিনজনের নামে লিখিত মামলা করেছেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে গারদে ঢুকিয়ে উপযুক্ত শাস্তির দাবী করেছেন, যা দেখে পরবর্তী সময়ে অন্য চিকিৎসকদের আক্রান্ত করার পূর্বে যেন অন্যরা ভয় পায় বলে জানান আক্রান্ত চিকিৎসক ধ্রুপদ দাস।
চিকিৎসক আক্রান্তের ঘটনায় গোটা ত্রিপুরা রাজ্যের চিকিৎসক মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যেই আগরতলা থেকে অল ত্রিপুরা গর্ভমেন্ট ডক্টর এসোসিয়েশনের সভাপতি ডক্টর প্রদীপ দেববর্মা শুক্রবার দুপুরে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে এসে জেলা হাসপাতালের সকল চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন। এবং বৈঠকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তাছাড়াও সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, পুলিশ যদি অবিলম্বে আক্রমণকারীদের গ্রেফতার না করে তাহলে চিকিৎসকরা আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন।উল্লেখ্য, আক্রমণকারী শ্যামল দাস শাসক বিজেপি দলের প্রভাবশালী নেতৃত্ব। তাছাড়াও আক্রমণকারী শ্যামল দাস ঊনকোটি জেলা পরিসদের প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি এবং বর্তমান ঊনকোটি জেলা পরিসদের নির্বাচিত বিজেপি দলের সদস্য।
আক্রমণকারী শ্যামল দাস ৫২-চন্ডীপুর মন্ডলের বিজেপি দলের একসময়ের মন্ডল সভাপতিও ছিলেন। শ্যামল দাসের সাথে থাকা সন্দীপ দাস এবং রঞ্জিত দাসও শাসক বিজেপি দলের সক্রিয় সদস্য। আক্রমণকারী তিনজনই ৫২-চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা।তবে, স্থানীয় ৫২-চন্ডিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী টিংকু রায় চিকিৎসক আক্রান্তের ঘটনায় উনি উদবীগ্ন। এবং আক্রমণ কারীরা কোনো অবস্থাতেই ছাড় পাবে না বলে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী টিংকু রায়। জেলা হাসপাতাল সূত্রে এখবর জানা যায়।