রাজ্যের যুব সমাজকে বিপথে পরিচালিত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বিজেপি সরকার। কাজ, কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে মুখ ঘুরিয়ে দিতে নেশা, বিভাজনের রাজনৈতিক খেলায় লিপ্ত। স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে হকের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছতে হবে। ইউনিট স্তর থেকে কর্মসংস্থান, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও নেশার বিরুদ্ধে কর্মসূচী গ্রহণ করে রাজ্যব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব নিন ডিওয়াইএফআই-টিওয়াইএফ । উদয়পুরে যুবদের ডাকা গণকনভেনাশনে এই আহ্বান জানান নেতৃত্বরা।বৃহস্পতিবার ডিওয়াইএফআই-টিওয়াইএফ উদয়পুর বিভাগীয় কমিটির আহ্বানে অনুষ্ঠিত হয় গণকনভেনশান। হল ভর্তি যুবকদের উপস্থিতে সাড়া জাগানো কনভেনশান থেকে গোটা মহকুমা জুড়ে আগামী দেড় মাসের টানা লড়াইয়ের কর্মসূচী গ্রহণ করে দু’টি সংগঠন।
সিপিআই(এম) উদয়পুর মহকুমা অফিসের হলঘরে আয়োজিত কনভেনশানের সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন যুবনেতা ফারুক আহমেদ ও দাঙ্গা বাহাদুর মলসম। এখানে কর্মসংস্থানের দাবিতে, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ও নেশার বিরুদ্ধে তিন দফা দাবিতে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন যুবনেতা রাজীব সেন, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি পলাশ ভৌমিক, টিওয়াইএফ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সুভাষ দেববর্মা, ডিওয়াইএফআই উদয়পুর বিভাগীয় সম্পাদক শুভ চক্রবর্ত্তী, টিওয়াইএফ বিভাগীয় সম্পাদক রাজেন্দ্র জমাতিয়া।
ডিওয়াইএফআই, টিওয়াইএফ রাজ্যস্তরে গণকনভেনশান করেই গোটা রাজ্যে যুবজীবনের তিন দফা দাবিতে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক লড়াই, আন্দোলনের কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। মূলত দাবি গুলি হচ্ছে সরকারের সকল দপ্তরের সমস্ত শূন্যপদ অবিলম্বে পূরণ করতে হবে। সরকারী দপ্তরে আউটসোর্সিং-র মাধ্যমে ঠিকা প্রথায় নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। রেগা, টুয়েপের মজুরি ও শ্রম দিবস বৃদ্ধি করতে হবে। চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করতে হবে।
রাজ্যের বেকারদের বঞ্চিত করে বহিঃরাজ্য থেকে নিয়োগ করা বন্ধ করতে হবে। রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্বের অবসান করে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। ছাত্রী, যুবতী, মহিলাদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। দুর্নীতি, চুরি, ছিনতাই, মাফিয়ারাজ, পাচার বানিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। নেশা ও নেশা কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।এদিন উদয়পুরের বিভাগভিত্তিক গণকনভেনশান থেকে মহকুমা জুড়ে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে কর্মসূচী ঘোষিত হয়। আাগমী ২০-২৩ ডিসেম্বর তিন দফা দাবিতে মহকুমার সর্বত্র পোস্টারিং ও লিফলেট বিলি করবে দুটি সংগঠন।
২৩ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি মহকুমার ১৯টি অঞ্চল এলাকায় ১৪টি যুব পদযাত্রা ও সভা সংগঠিত হবে। অঞ্চলস্তরে কর্মসূচীর পর ১৫ জানুয়ারি বিভাগভিত্তিক যুব মিছিল ও জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। যুবকসহ সাধারন জনগণের হকের দাবিতে যুবকদের নেওয়া কর্মসূচীকে সফল করতে সব অংশের যুবকসহ সাধারন মানুষদের সার্বিক উপস্থিতি ও লড়াইকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছে ডিওয়াইএফআই-টিওয়াইএফ উদয়পুর বিভাগীয় নেতৃত্ব।
গণকনভেনশানে নেতৃত্বরা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ভয়ঙ্কর অবস্থা রাজ্য জুড়ে। কাজের মারাত্মক সংকট। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক-যুবতী কাজ চাইছে, আর সরকার কাজের সুযোগকে সংকুচিত করছে। টেট পরীক্ষা বন্ধ, যারা টেট উত্তীর্ন হয়ে বসে আছে তাদেরও চাকরি নেই। সরকারী সমস্ত দপ্তরে হাজার হাজার শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। নেতৃত্বরা পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, বেকারত্বের হারে ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরা দেশের সামনের সাড়িতে। দেশে মোদির নেতৃত্বে সরকার যে পথে চলছে ত্রিপুরাও একই পথে। অথচ এই বিজেপি কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ত্রিপুরার জনগণ তা সকলের জানা আছে। আর বাস্তবে এরা কি করছে? ভাষন, মেলা, খেলা নিয়ে ব্যস্ত সরকার।
যুবকসহ সাধারন মানুষের জন্য কোন কাজ নেই। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না। রুখে দাঁড়াতে হবে।নেতৃত্বরা বলেন, কর্মসংস্থানের দাবিতে যুবরা যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তারজন্য নেশা, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনায় বুঁদ করে রাখা হচ্ছে যুবকদের। নেশামুক্তের শ্লোগানের আড়ালে নেশায় ছেয়ে গেছে ত্রিপুরা। আর রাজ্যজুড়ে আইনের শাসন বলতে এখন কিছু নেই। পরিসংখ্যান বলছে অপশাসনেও ত্রিপুরা গোটা দেশে সামনের সারিতে। গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের জালকে ছিন্ন করতে মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরে লড়াইয়ের ময়দানে নিয়ে আসতে হবে। লড়াইয়ের গণজাগরণ সৃষ্টি করার দায়িত্ব ডিওয়াইএফআই-টিওয়াইএফকে গ্রহণ করার আহ্বান রাখেন নেতৃত্বরা।