দেরিতে হলেও বিরোধীরা একে একে কদমতলা কান্ড পরিদর্শন করতে আসছেন।দীর্ঘ এক মাসের উপর অতিবাহিত হওয়ার পর প্রথমে পরিদর্শনে আসেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।তারপর শাসক দলীয় নেতৃত্ব সুবল ভৌমিক।এবার ১২ই নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুর বারোটা নাগাদ কদমতলা কান্ড পরিদর্শনে আসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা,বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ কংগ্রেসের জেলা ও স্থানীয় স্তরের এক ঝাঁক নেতৃত্বরা।উল্লেখ্য গত ছয় অক্টোবর কদমতলায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কদমতলা বাজারের প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান।
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কদমতলা বাজার মসজিদ,ভেঙে দেওয়া হয়েছিল একটি শনি মন্দির সহ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় দশটি বসত বাড়ি।পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল মোবাইল দোকান ব্যবসায়ী এক যুবক,আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন।মূলত এই সমস্ত ঘটনা পরিদর্শনে এদিন উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলায় ছুটে আসেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ আশীষ কুমার সাহা।এদিন প্রথমেই তারা কদমতলা প্রবেশের পথে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি বসতবাড়ি,এবং ভেঙে ফেলা কবরস্থান পরিদর্শন করেন।কথা বললেন প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্যদের সাথে,বিস্তারিত ঘটনা জানার চেষ্টা করেন সেখানে। তারপর উনারা পরিদর্শনে আসেন কদমতলা বাজার এলাকায়।বাজার এলাকায় প্রায় শতাধীক ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা যারাই সে সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রত্যেকের সাথে মতবিনিময় করেন।সাথে ছিলেন কদমতলা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক ।
তারপর কদমতলা বাজার মসজিদ ও শনি মন্দির পরিদর্শন করেন কংগ্রেস নেতৃত্বরা।পরিদর্শন চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা বলেন এ সমস্ত ঘটনা আগে কোনদিন হয়নি যা রাজ্যের মানুষকে বর্তমানে দেখতে হচ্ছে,আগামী দিনেও হয়তোবা দেখতে হবে,তাই সকল অংশের মানুষকে সজাগ থাকার আহ্বান রাখেন তিনি।পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের দুর্বলতা এবং শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব সহ এক বিধায়কের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।তাছাড়া হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সহ দোকান ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং পুলিশের গুলিতে নিহত পরিবারে একটি সরকারি চাকরির দাবিসহ আহতদের সাহায্যের আবেদন রাখেন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা।
এদিকে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন এ সমস্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে বলেন রাজ্য সরকার এবং তার প্রশাসন উক্ত ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী।তাদের ঢিলে মনোভাবের কারণে উভয় সম্প্রদায়ের একটা দুষ্টচক্র এমন জঘন্যতম ঘটনার সুযোগ পেয়েছে।শুধু কদমতলা নয় রাজ্যের একাধিক জায়গায় এমন ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের দিশা ঘুরাতে এমন চক্রান্ত করে যাচ্ছে একটা গোষ্ঠী।তাদের থেকে বেঁচে থাকতে হবে।”বাটোগে তো কাটো গে “প্রসঙ্গে তিনি বলেন যারাই বাড়ছে তারাই কাটছে,সনাতনীদের কোন ভয় নেই,ভয় পাচ্ছে কারা? যারা হিংস্র রাজনীতি করে!তাই এখন তারাই বলছে “বাটো গো তো কাটোগে”।তাছাড়া তিনি অত্যন্ত পরিতাপের সহিত বলেন উক্ত কাণ্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পাঁচ হাজার টাকা করে আপাতত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে যেটা ঘোষণা করা হয়েছিল তারমধ্যে মাত্র ২১ জনকে মনে হয় দেওয়া হয়েছে।
বাকিরা একটি টাকাও পায়নি।নাম না করে তিনি সরকার বাহাদুরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন।পাশাপাশি তিনি এলাকার সর্বস্তরের সুবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন রাখেন যেন শান্তি-শৃঙ্খলা-সুভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য ।কারণ চক্রান্তকারীরা আবারো এসব চক্রান্তের চেষ্টা করবে।তাই তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। তিনি আরো বলেন দলমত নির্বিশেষে মানুষ হিসাবে মানবতার জয় নিশ্চিত করতে জেহাদ ঘোষণা করুন,কারণ মানবতাই হচ্ছে আসল ধর্ম,সর্বধর্ম সেই কথাই বলে। মানুষ যতক্ষণ না সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে ততক্ষণ তারা এভাবেই চালিয়ে যাবে।তাই চক্রান্তকারীদের উৎখাত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের অনুরোধ রাখেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।