দেখলে মনে হবে এযেন গভীর জংগল কিংবা আবর্জনার স্তুপের পাহাড়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বাস্তবে এটি মহকুমা হাসপাতাল। কোনো এডিসি এরিয়া কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল নয়, খোদ ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহর শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত রাজীব গান্ধী মহকুমা হাসপাতাল। অবিভক্ত উত্তর জেলা তথা বর্তমানে উত্তর জেলা, ধলাই জেলা এবং ঊনকোটি এই তিন জেলার জেলা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত ছিলো এই রাজীব গান্ধী মহকুমা হাসপাতালটি। জেলা বিভক্ত হবার পর বর্তমানে এটি মহকুমা হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে। আজ সেই হাসপাতালটি জঙ্গল আর ময়লায় ভরা।
চারপাশের আবর্জনা আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ যেন হাসপাতালের প্রতি দপ্তরের কর্তাদের উদাসীনতার চিহ্ন বহন করছে। হাসপাতালের পুরোনো অ্যাম্বুলেন্স গুলো দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় পরে থাকায় জং ধরে গেছে। আর গাড়িকে কেন্দ্র করে গজিয়ে উঠেছে জঙ্গলের পাহাড়। হাসপাতাল চত্তরের দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায়,পরিচ্ছন্নতার অভাবে কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনগুলি দীর্ঘদিন ধরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করার ফলে ড্রেনগুলোতে ময়লা জমে মশার প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
হাসপাতাল কোয়ার্টারগুলোর চারপাশে ছোট ছোট জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে,আর ভাঙা জলের ট্যাপের কারনে ট্যাঙ্ক থেকে জল ছিটকে পড়ে নষ্ট হয়ে ট্যাঙ্ক প্রায় এক বছর ধরে খালি। তাই রোগীর আত্তীয়রা জলের জন্য ছুটতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দোকানে। হাসপাতাল কোয়ার্টারের বাসিন্দারা বলেন আমরা এখানে খুবই সমস্যায় আছি। জঙ্গলের কারণে সাপখোপ পর্যন্ত ঢুকে আসছে ঘরের ভেতর। পর্যাপ্ত জল পাচ্ছিনা, আর পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগও নেয়া হয় না।
ড্রেনে ময়লা জমে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনোরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কয়েক বছর আগেও এই হাসপাতাল ছিল পুরো জেলার মানুষের কাছে চিকিৎসার একমাত্র নির্ভরযোগ্য জায়গা। কিন্তু বর্তমানে কৈলাসহরের এই মহকুমা হাসপাতাল যেন দপ্তরের কর্তাদের নজরের বাইরে চলে গেছে।
হাসপাতালের ভিতরের দৃশ্যও বাইরে থেকে আলাদা কিছু নয়। জায়গায় জায়গায় ময়লা, ভাঙাচোরা চেয়ার, অগোছালো ওয়ার্ডের সব কিছু মিলিয়ে হাসপাতালের অবস্থা আরও শোচনীয়। স্বাস্থ্য সেবায় প্রয়োজনীয় মান এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশের কোনো নজির নেই এখানে। কৈলাসহর মহকুমা হাসপাতালের এমন অবহেলিত চেহারা কেবলই দপ্তরের কর্তাদের নজরদারির অভাব নয়, এটি স্বাস্থ্য সেবার প্রতি দায়িত্বহীনতারই প্রতিচ্ছবি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতাল কোয়ার্টারের বসবাসকারীদের প্রশ্ন —কবে ফিরবে এই হাসপাতালের আগের সেই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আর কবে হবে জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কৈলাসহরের রাজীব গান্ধী মহকুমা হাসপাতালের মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে পাপিয়া রুদ্র পাল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নজরদারি কমেছে মহকুমা হাসপাতাল ও হাসপাতাল চত্তরের অন্যান্য বিষয়ে। পাপিয়া রুদ্র পালের উদাসীনতার কারনেই মহকুমা হাসপাতালের এমন শোচনীয় অবস্থা বলেই অনেকের অভিমত। পাপিয়া রুদ্র পাল যেদিন থেকে মহকুমা হাসপাতালের দায়িত্ব পেয়েছেন, সেদিন থেকেই হাসপাতালের কোনো ধরনের খবর সংগ্রহের জন্য সংবাদ প্রতিনিধিরা পাপিয়া রুদ্র পালের কাছে গেলে উনি সংবাদ প্রতিনিধিদের উপেক্ষা করে থাকেন।
হাসপাতালের চতুর্দিকে কিংবা হাসপাতালের ভিতরে এত নোংরা পরিবেশের কারন জানার জন্য নয় নভেম্বর পাপিয়া রুদ্র পালের বক্তব্য জানার জন্য সংবাদ প্রতিনিধিরা উনার সাথে যোগাযোগ করলেও উনি কিছু বলবেন না বলে পরিস্কার জানিয়ে দেন। এবার দেখার বিষয় দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা হাসপাতালের বর্তমান এই অবস্থার জন্য কি সিদ্ধান্ত নেয়।